মণিরাজ ঘোষ, সবং (পশ্চিম মেদিনীপুর), ১৫ সেপ্টেম্বর: একের পর এক মর্মান্তিক খবরে শোকে মুহ্যমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা! আনলক পর্বে করোনা যেন ক্রমেই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। রহস্যময় এই ভাইরাসের আক্রমণে কত প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে! সবথেকে দুঃখজনক, একের পর এক করোনা যোদ্ধার মৃত্যু! করোনা’র বিরুদ্ধে লড়াইতে নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে যাঁরা পরিষেবা দিয়ে চলেছিলেন, প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের, করোনা’র আক্রমণেই মৃত্যু বড় মর্মান্তিক এই সমাজের কাছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একেবারে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, সবং থানার মেজবাবু (সেকেন্ড অফিসার) অতণু প্রামাণিক মাত্র ৩৮ বছর বয়সেই করোনা’য় শহীদ হলেন! আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হাওড়ার নারায়নী হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর, জেলার আরেক প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ বেরা’ (৩৫)ও বড্ড অসময়ে চলে গিয়েছিলেন, মারণ ভাইরাসের মর্মান্তিক আক্রমণে। তিনি পিংলার জলচকের বাসিন্দা ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ওই সবং, পিংলা সহ সারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যেন একের পর এক শোক সংবাদে কাতর হয়ে উঠছেন!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর সবং হাসপাতালে র্যাপিড আ্যন্টিজেন টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর তাঁকে ডেবরা সেফ হোমে ভর্তি করা হয়। জ্বর না কমায় দু’দিন পরে পাঠানো হয় লেভেল ফোর শালবনী করোনা হাসপাতালে। তাঁকে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পরও অবস্থার অবনতি হওয়ায়, গতকাল বিকেলে হাওড়ার নারায়নী হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই প্রায় ১৪ ঘন্টার লড়াই শেষ হয়ে যায় আজ (১৫ সেপ্টেম্বর)সকাল ৯ টা নাদ! সবং পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম মাইতি জানিয়েছেন, “১২ তারিখ রাতেই কথা হয়েছিল ওনার সঙ্গে। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করাতে বলেছিলেন, আইসিইউতে আছি, ফলে ভাল আছি বলি কী করে বলুন তো? ভাবতেই পারিনি এই দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে সবং’বাসীর জন্য। এত তৎপর, এত তরুণ আধিকারিক এভাবে চলে যাবেন ভাবতে পারছিন!” উল্লেখ্য যে, গত ১ লা সেপ্টেম্বর থানার বড়বাবু (ওসি) সুব্রত বিশ্বাসের রিপোর্টও পজিটিভ এসেছিল। বর্তমানে, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। কিন্তু, তার মধ্যেই এই মর্মান্তিক দুঃসংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সবং থানা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশমহলে! আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল প্রয়াত পুলিশ অফিসার অতনু প্রামাণিক’কে শেষ শ্রদ্ধা (প্রতিকৃতিতে) জানানো হবে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, বছর দু’য়েক আগে শালবনী থানাতেও কর্মরত ছিলেন, কর্তব্যপরায়ণ এই এস.আই (Sub inspector)। তবে, সম্প্রতি তাঁর ব্লাড সুগার ধরা পড়েছিল বলে জানা যায়। নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো তাঁকে। ফলে, কো-মর্বিডিটির সঙ্গে করোনা যোগ হওয়ায় পরিস্থিতি চিকিৎসকদের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। করোনা’র আশঙ্কাজনক প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায় চরম দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এভাবেই। অকালেই ঝড়ে পড়ছে কত প্রাণ। মাত্র ৩৮ বছরেই বিদায় নেওয়া পুলিশ অফিসার অতনু বাবু রেখে গেলেন স্ত্রী ও একমাত্র শিশুকন্যা’কে।

