দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২৮ জানুয়ারি: জঙ্গলমহলের মানুষের সঙ্গে যুগপৎ ভয় ও ভক্তির সম্পর্ক মাতঙ্গদলের। তাই, মাতঙ্গ বা ঐরাবত বা হাতি তাঁদের কাছে ‘হাতিঠাকুর’। দলমার এই দামালরা তাই যতই ফসল কিংবা ঘরবাড়ি নষ্ট করুক না কেন, কোথাও যেন অন্তরের অকৃত্রিম ভক্তি-শ্রদ্ধার পাত্র হয়েই থাকেন গজরাজের দল। কোনো দুর্ঘটনায় এই মত্ত মাতঙ্গদের মৃত্যু হলেও কেঁদে ওঠে মন! সেই আন্তরিক সম্পর্ক থেকেই মেদিনীপুর সদর ব্লকের নেপুরা গ্রামের অধিবাসীবৃন্দ মৃত দুই পূর্ণবয়স্ক হাতির স্মরণে গত তিন বছর ধরে করে চলেছেন, হাতি ঠাকুরের পুজো। উদ্যোক্তা, ওই গ্রামেরই লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ, শঙ্কর ঘোষ, নিখিল দাস, স্বপন বেরা, স্বরুপ দাস, বাপন মাঝি সহ আপামর নেপুরা গ্রামবাসীবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুটি পূর্ণ বয়স্ক হাতির মৃত্যু হয়, মেদিনীপুর শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত এই নেপুরা গ্রামে! হাতি ঠাকুরের এই আকস্মিক মৃত্যু শোকস্তব্ধ করে দিয়েছিল গ্রামবাসীদের। পরের বছর (২০১৯) থেকেই গ্রামবাসীরা পবিত্র মাঘী পূর্ণিমা তিথি ধরে হাতি ঠাকুরদের স্মরণে ও মঙ্গল কামনায় পুজো করে আসছেন। এই বছর মাঘী পূর্ণিমা’র দিন, অর্থাৎ আজ (১৪ ই মাঘ, ২৮ জানুয়ারি), যথারীতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে এই হাতি ঠাকুরের পুজো অনুষ্ঠিত হল গ্রামে। গ্রামবাসীরা বললেন, “আমরা জঙ্গলের এই মহারাজদের হাতি ঠাকুর রূপেই মানি। অবলা এই প্রাণীরা হয়তো, খাদ্যের অন্বেষণে বা প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালায় কিংবা অনেক সময় নিজেদের আত্মরক্ষার তাড়নায়, মনুষ্য সমাজের উপর নিজেদের অজান্তেই অত্যাচার চালায়। অনেক সময় ক্ষোভ জন্মালেও তাই এদের উপেক্ষা করা যায়না। সর্বোপরি, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের স্বার্থেও এদের বেঁচে থাকা জরুরি। তাই আকস্মিক দুর্ঘটনায় এদের মৃত্যু হলে কেঁদে ওঠে মন। আমরা গত তিন বছর ধরে এই গ্রামে হাতি ঠাকুরের মঙ্গল কামনায় পুজো করছি।”