দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তরুণ অধ্যাপকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর (আঁধিচক) এলাকায়। মৃত অধ্যাপকের নাম- প্রতিম মাইতি (৩১)। সদ্য তিরিশ পেরোনো এবং পনেরো দিন আগেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া প্রতিম বাবু ছিলেন নাড়াজোল রাজ কলেজের এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক। জানা যায়, সোমবার (১ লা ফেব্রুয়ারি) মাঝরাতে হঠাৎ গোঁগানি শুরু হয় এবং তার পরেই জিভ বের করে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন প্রতিম। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রতিমের পরিবারের অভিযোগ, শ্বাসরোধ করে তাঁদের ছেলেকে খুন করেছে ‘নববধূ’! তাঁদের মতে, সুস্থ ছেলে, রাতে খাবার খেয়ে ঘুমোতে গেছে। ঘরে নববধূ ছাড়া কেউ ছিলনা এবং ঘরের দরজাও ভেতর থেকে লাগানো ছিল। হঠাৎ করে কি এমন হল! অভিযোগ অস্বীকার করলেও, নববধূ ব্রততীও জানিয়েছে, প্রতিমের কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিলনা। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করেই গোঙানি শুরু হয়, তারপরই সংজ্ঞা হারায় সে। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে তরুণ এই অধ্যাপকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে, এখনও সেই রিপোর্ট আসেনি এবং পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ হয়নি বলেই, তদন্ত শুরু করা হয়নি পুলিশের তরফে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিম ২০১৯ সালে দাসপুর থানার নাড়াজোল রাজ কলেজে এডুকেশন বিভাগে অধ্যাপনার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গত, ১৮ ই জানুয়ারি (২০২১), প্রতিমের বিয়ে হয় ডেবরা থানার শালকাঠি গ্রামের সুভাষ চন্দ্র দে’র কন্যা ব্রততীর সঙ্গে। জানা গিয়েছে, মেট্রিমনি সাইটের মাধ্যমে বিয়ের যোগাযোগ হয় দুই পরিবারের। ব্রততী এম টেক ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের আগে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও, বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, বিয়ের মাত্র (দু’সপ্তাহ) ১৫ দিনের মাথায় সুস্থ সবল ছেলের এভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন উঠছে! মৃত অধ্যাপকের মা বলেন, “আমার সুস্থ সবল ছেলেকে মেরে দিল! রাতে খাবার খেয়ে দু’জনে ঘুমোতে গেল। তারপর রাতে ছেলে জিভ বের করে মারা গেল! বউমা আমার ছেলেকে মেরে দিল। আমরা চাই তদন্ত করে ওকে (বউমাকে) যেন জেলে ভরা হয়।” মৃত প্রতীমের বাবা মানিক মাইতি বলেন, “বউমা প্রায়ই বলতো আমি এম টেক ইঞ্জিনিয়ার। আমি গ্রামের বাড়িতে থাকবো না। বাইরে চাকরি করবো। বাড়িতে চুড়িদার পরবো। ছেলে বউমাকে বোঝাতো, দুটো মাস অন্তত গ্রামে শাড়ি পরো, তারপর চুড়িদার পরলে পরবে। আমাদের অনুমান বউমাই আমার ছেলেকে শ্বাসরোধ করে মেরে দিয়েছে।” মৃতের বাবা এও বলেন, “ছেলের মৃত্যুর জন্য আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য যা করতে হয় করবো। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।”
এদিকে, বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় অধ্যাপকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে! অনেকেই বলছেন, “শুনেছি, নতুন বউয়ের চুড়িদার পরা নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল।” অনেকে বলছেন, “নতুন বউ অধিকাংশ সময় ফোনে ব্যস্ত থাকেন। কারোর সঙ্গে তেমন ভাবে কথাবার্তাও বলতেন না।” অপরদিকে, নববধূর অভিযোগ, তাঁর স্বামী ভালো ছিলেন, কিন্তু শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর, জা কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না। এমনকি নববধূ কোনোকিছু রান্না করলে সেটা খেতেনও না তার ভাসুর! নববধূ ব্রততীর দিদি শতাব্দী চৌধুরীর দাবি, “ঘটনার তদন্ত হোক। আমার বোনের উপর মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে। ওদের দু’জনের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। আমার বোন কোনোভাবেই একাজ করতে পারেনা। বোন খুব সাদাসিধে।” নববধূর মা, মৃতের শাশুড়ি ঝর্ণা দে বলেন, “সোমবারও জামাইয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমি মেয়েকে নিয়ে ওদের আসতেও বলেছি। বুধবার ওদের দু’জনের আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। একটা বিড়ালকে মারলে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করত। সে কখনো মারতে পারেনা। জামাই খুব ভালো। কিন্তু ওদের বাড়ির লোক ভালো নয়। মেয়ে ফোন করে বলতো, বাড়ির কেউ ভালো ব্যবহার করতোনা। আমাদেরও পরিবারের লোককে খুব একটা পছন্দ ছিলনা। ছেলেটা ভালো বলেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ের কপালে যে এমন ছিল তা ভাবতেও পারিনি!” অস্বাভাবিক এই ঘটনায় দুই পরিবারই বিধ্বস্ত। গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই মুহূর্তে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছেন সকলে!